পুরনো ৫০টি গাছ কাটছে রুয়েট কর্তৃপক্ষ, পছন্দের লোকের কাছে নাম মাএ মূল্যে বিক্রি

পুরনো ৫০টি গাছ কাটছে রুয়েট কর্তৃপক্ষ, পছন্দের লোকের কাছে নাম মাএ মূল্যে বিক্রি

পুরনো ৫০টি গাছ কাটছে রুয়েট কর্তৃপক্ষ, পছন্দের লোকের কাছে নাম মাএ মূল্যে বিক্রি
পুরনো ৫০টি গাছ কাটছে রুয়েট কর্তৃপক্ষ, পছন্দের লোকের কাছে নাম মাএ মূল্যে বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার : ছোটবেলা থেকেই রুয়েটের মধ্যে আমার শৈশব কেটেছে। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই অনেক গাছ ক্যাম্পাসের ভেতরে ছিল। যে অর্ধশত গাছগুলো রুয়েট কর্তৃপক্ষ কাটছে তার বয়স আনুমানিক ৬০ থেকে ৮০ বছরের বেশি হবে তো কম হবে না। এসব গাছ রুয়েটের ঐতিহ্য বহন করে এগুলো এভাবে কাটা সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পাশে বসবাসকারী প্রবীণ ব্যক্তি শ্রী সুকুমার সরকার (৮৮)।

অনেকটা আক্ষেপের সাথে অভিযোগের স্বরে তিনি বলেন, যে গাছগুলো বিক্রি হয়েছে তার দামও খুব যৎসামান্য মূল্যে বিক্রি হয়েছে। সরকারি কোন গাছ কাটতে হলে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি লাগে। কিন্তু সেটিও তারা নেননি। আবার শুনছি যারা গাছের টেন্ডার নিয়েছেন তারা রুয়েটেরই কর্মচারী।

রুয়েটের পাশেই অক্টোর মোড়ের আরেক প্রবীণ বাসিন্দা মো. মোসলেম উদ্দিন (৯৫)। পেশায় ঠিকাদার ও কাঠ মিলের মালিক ছিলেন। এক সময় বড় বড় গাছ কেনা বেচার সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। ব্যবসা ছেড়েছেন অনেক আগেই কিন্তু গাছ সম্পর্কে রয়েছে তার দারুণ অভিজ্ঞতা।

রুয়েটের অর্ধশত বছরের উর্ধ্ববয়সী গাছগুলোর কর্তনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই গাছ গুলো যে দামে রুয়েট কর্তৃপক্ষ বিক্রি করছেন তাতে সরকার রাজস্ব থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা বঞ্চিত হচ্ছে। ২০১০ সালেই আমি ৭টি গাছ রুয়েট থেকে সর্বশেষ অকশানে নিয়েছিলাম পৌনে ৩লাখ টাকায়। কিন্তু আজ ১১ বছর পর বর্ষীয়ান গাছগুলো পানির দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আম, লিচু, মেহগনি, কড়ই, মিনজিরি এবং কৃষ্ণচূড়া মিলিয়ে রুয়েটের গোলাম মোস্তফা নামের এক কর্মচারীকে ১৫টি গাছ মাত্র ১ লাখ ২৭ হাজার টাকায় দিয়েছেন। এতে অনেকটায় লস হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এতে নি:সন্দেহে অনুমেয় তারা দূর্নীতি করেছেন। অন্যথায়, এতো কম দামে গাছগুলো বিক্রি হওয়ার কথা নয়।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘১১ বছর পূর্বেও খড়ির মূল্য ৪০-৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতো। গাছের দামও ছিল ভালো। বর্তমানে শুধু খড়ির মূল্যই ২০০ টাকা মণ। সেক্ষেত্রে এসব ৭০-৮০ বছরের গাছগুলোর মূল্য কম করে ধরলেও আনুমানিক ৭ থেকে ৮ লাখ হবে। আবার একটি পঞ্চাশ উর্ধ্ব মেহগনি গাছের মূল্যই দেড় লাখের কম হওয়ার কথা নয়, সেখানে মেহগণি, আম গাছসহ ১৫টি গাছ মাত্র ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা অনেক কম।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রুয়েটের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, রুয়েট কর্তৃপক্ষ প্রায় ৫০টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেগুলোর অধিকাংশ গাছের বয়স ৭০-৮০ বছর। ইতোমধ্যে প্রায় গোপনে ১৫টি গাছ কাটা হয়েছে। বন বিভাগও এ বিষয়ে কিছুই জানে না। মূলত: তারা নতুন প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ভবন নির্মাণের অজুহাতে এসব গাছ বিক্রি করছেন। এসব অর্ধশত বর্ষী গাছগুলো কম দামে বিক্রি করে মুনাফাও হাতিয়েছে রুয়েট কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরও জানান, ‘গাছগুলো গোলাম মোস্তফা ও শাহ জাহান যোগসাজোশ করে স্বল্প মূল্যে টেন্ডার করিয়েছেন। গোলাম মোস্তফা রুয়েটে কর্মরত কর্মচারী। অন্যদিকে, শাহ জাহানের স্ত্রী রুয়েট মেডিকেলের স্টাফ। শাহ জাহান রুয়েটের ক্যাম্পাসেই কর্মচারী ভবনেই বসবাস করেন। গাছগাছালী কেটে বিক্রি করা ও ঠিকাদারি বিভিন্ন কাজের সাথে তিনি জড়িত।’

এ বিষয়ে রুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন বলেন, সম্প্রতি সরকার ছয়শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। যার আওতায় আছে ১১টি ১০ তলা ভবন নির্মাণ ও আরও ২টি মেডিকেল ভবন নির্মাণ ও একটি ছাত্রাবাসের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণের কাজ। তবে এজন্য মোট কতটি গাছ কাটা হচ্ছে তা আমার জানা নেই।’

গত ১৫ আগস্টেও বেশকিছু গাছ গোপনে কাটা হয়েছিল বলে জানা গেছে। এব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত ১৫ মার্চ, ২০২০ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে এবং এই গাছ কাটার বিষয়ে ৩বার টেন্ডারও করা হয়েছে। এতে গোপন করার কিছু নেই।
অভিযোগ উঠেছে রুয়েট কর্মচারী গোলাম মোস্তফাকে যোগশাজসে গাছ টেন্ডারে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বন বিভাগ কর্মকর্তারাও বলছেন, তাদেরকে গাছ কাটার বিষয়ে আপনার অবগত করেননি। এমনকি কোন প্রকার অনুমোদনও নেননি। এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়টি পরিকল্পনা ও উন্নয়নের অফিস এবং রুয়েটের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার তদারকি করছে। আপাতত আমার নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে আমি নামাজে যাবো ভাই। ফ্রি থাকলে অফিসে আসুন, চা খেতে খেতে এবিষয়ে কথা বলা যাবে।’

এদিকে সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অমিত রায় চৌধুরী এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক পরিচালক জগলুল সাদাত গণমাধ্যমকে জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত তারা এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দিতে পারবেন না।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এএইচএম মাহবুবুর রহমান বলেন, ’

তিনি আরও বলেন, ‘রুয়েট এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুরনো এবং বড় গাছ থাকা ঐতিহ্য ও গর্বের। মানুষের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ ছাড়াও এসব গাছ বিভিন্ন ধরণের পাখির বাসস্থান। গাছ লাগালে পুরনো গাছ কাটার ক্ষতিপূরণ সম্ভবপর নয়।’

পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব টুংকু বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি ইদানীং রাজশাহীতে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়গুলোতে উন্নয়নের নামে নির্বিচারে গাছ কাটার অশুভ প্রতিযোগিতায় নেমেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পুরনো গাছ না কেটেও উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে নেওয়া যেতো। এতে খুব একটা ক্ষতি হতো না। যে গাছগুলো কাটা হয়েছে বা হচ্ছে তা মোটেও ঠিক কাজ হচ্ছে না।’

এদিকে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহমেদ নিয়ামুর রহমান বলেন, ‘সরকারি গাছ কাটার জন্য কর্তৃপক্ষের বাধ্যতামূলকভাবে অনুমোদন নেওয়া উচিত। বনবিভাগ অনুমতি না দিলে কোন সরকারি দপ্তরই ছোট কিংবা বড় কোন গাছই কাটতে পারবে না। আবার, কোন গাছ কাটার প্রয়োজন হলে বন বিভাগই গাছের দাম মূল্যায়ন করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রুয়েট কর্তৃপক্ষ গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগের অনুমতি না নিয়ে সরকারি আইন অমান্য করেছে।কর্তৃপক্ষের উচিৎ ছিল বন বিভাগকে অবহিত করা, গাছ টেন্ডারের অনুমতি নেওয়া এবং একই সাথে গাছগুলোর মূল্য আমাদের মাধ্যমে নির্ধারণ করা।’

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply